গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস বা তৃতীয় ত্রৈমাসিক হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় মায়ের শরীরে ও মানসিক অবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, শিশুও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই এই পর্যায়ে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করলে মা ও শিশুর সুস্থতা বজায় থাকে। নিচে গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসের গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা তুলে ধরা হলো—
![]() |
গর্ভবতী মায়ের শেষ তিন মাসের সতর্কতা |
১. নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
শেষ তিন মাসে প্রতি দুই সপ্তাহ বা প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত চেকআপ করান। রক্তচাপ, ওজন, রক্তে শর্করার মাত্রা ও শিশুর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
২. সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন
এই সময়ে শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টির চাহিদা থাকে। খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন রাখুন। দুধ, ডিম, মাছ, ডাল, সবজি, ফলমূল ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন। অতিরিক্ত তেল-ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
শেষ দিকে শরীর ভারী হয়ে যায়, ক্লান্তি ও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। তাই দিনে কিছুটা বিশ্রাম ও রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিন। বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমালে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে ও শিশুর জন্যও ভালো।
৪. হালকা ব্যায়াম করুন
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা হাঁটা বা প্রেগনেন্সি ইয়োগা করতে পারেন। এটি রক্ত চলাচল ভালো রাখে, পেশি নমনীয় হয় এবং প্রসব সহজ হয়।
৫. মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখুন
শেষ তিন মাসে অনেক মায়েরা মানসিক চাপ, ভয় বা উদ্বেগে ভোগেন। তাই পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান, প্রিয় সংগীত শুনুন, বই পড়ুন। ইতিবাচক চিন্তা গর্ভস্থ শিশুর মানসিক বিকাশেও ভালো প্রভাব ফেলে।
৬. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
শরীর পরিষ্কার রাখুন এবং অন্তর্বাস নিয়মিত পরিবর্তন করুন। সংক্রমণ এড়াতে খুব আঁটসাঁট পোশাক পরবেন না। এছাড়া টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে ধুয়ে শুকনো রাখুন।
৭. প্রসবের প্রস্তুতি নিন
শেষ মাসে হাসপাতালের ব্যাগ তৈরি রাখুন — প্রয়োজনীয় নথি, পোশাক, শিশুর কাপড়, ওষুধ ও জরুরি সামগ্রী গুছিয়ে রাখুন। পরিবারকেও প্রস্তুত রাখুন যেন হঠাৎ প্রসববেদনা শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া যায়।
৮. বিপজ্জনক লক্ষণ অবহেলা করবেন না
রক্তপাত, মাথাব্যথা, চোখ ঝাপসা দেখা, পেটব্যথা, শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত ফোলা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপসংহার
গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে মায়ের যত্ন মানে শিশুর যত্ন। নিয়মিত চিকিৎসা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, বিশ্রাম ও মানসিক শান্তি এই সময়ের মূল চাবিকাঠি। সতর্ক থাকলে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থভাবে নতুন জীবনের সূচনা করতে পারেন।